গ্রিনল্যান্ড , যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিকবার গ্রিনল্যান্ড দ্বীপ নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি তিনি আবারও বলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র এই দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। এর কারণ হিসেবে তিনি অর্থনৈতিক নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে ডেনমার্কের অধীনে থাকা গ্রিনল্যান্ডের স্বশাসিত সরকার ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে যে, দ্বীপটি বিক্রি হবে না।
বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ এবং এর খনিজ সম্পদ
উত্তর আমেরিকার উত্তর-পূর্বে সুমেরু অঞ্চলে অবস্থিত গ্রিনল্যান্ড বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ। এটি খনিজ সম্পদে ভরপুর, যদিও এসব সম্পদের বেশিরভাগ এখনো অনাবিষ্কৃত এবং অব্যবহৃত। বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিমা বিশ্বের ভবিষ্যৎ খনিজ সম্পদের বিশাল অংশ সরবরাহ করতে পারার ক্ষমতা গ্রিনল্যান্ডের রয়েছে।
আমারক মিনারেলস নামক একটি খনি কোম্পানি গ্রিনল্যান্ডের দক্ষিণ প্রান্তে একটি সোনার খনি নিয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান এলডুর ওলাফসন জানিয়েছেন, সোনা, তামা, নিকেল, এবং বিরল মৃত্তিকা ধাতুর মতো মূল্যবান খনিজের বিশাল সম্ভাবনা এখানে রয়েছে। তিনি বলেন, গ্রিনল্যান্ডের খনিজ সম্পদ পশ্চিমা বিশ্বের জন্য আগামী কয়েক দশক ধরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
খনি কার্যক্রম এবং চ্যালেঞ্জ
গ্রিনল্যান্ডের দুর্গম পরিবেশ এবং আবহাওয়া খনির কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন করে তুলেছে। দ্বীপটির ৮০ শতাংশই বরফে ঢাকা। যাতায়াতের জন্য রাস্তা কিংবা সহজলভ্য পরিবহন ব্যবস্থাও নেই। তবে খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য বিভিন্ন কোম্পানি এখানে কাজ করছে। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদনের মাধ্যমে ১০০টির বেশি কোম্পানি অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ব্রিটিশ, কানাডীয়, এবং অস্ট্রেলীয় প্রতিষ্ঠান।
খনিজ উত্তোলনের প্রক্রিয়াগুলোতে পরিবেশ সংক্রান্ত কঠোর নিয়ম এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকায় কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে। তবুও, ভবিষ্যতে নতুন তিন থেকে পাঁচটি খনি চালুর আশা করছে স্থানীয় সরকার।
গ্রিনল্যান্ডের অর্থনীতি ও স্বাধীনতার সম্ভাবনা
খনিজ সম্পদ থাকা সত্ত্বেও গ্রিনল্যান্ডের অর্থনীতি এখনো সরকারি খাত এবং মৎস্যসম্পদের ওপর নির্ভরশীল। ডেনমার্ক থেকে বার্ষিক ভর্তুকি পেয়ে থাকে অঞ্চলটি। তবে খনিশিল্পের প্রসার ঘটলে এই নির্ভরতা কমতে পারে। স্থানীয় সরকার মনে করে, খনিজ সম্পদের আয়ের মাধ্যমে তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবে এবং স্বাধীনতার জন্য আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে পারবে।
স্থানীয় মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি
স্থানীয় মানুষজন খনিশিল্প নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। অনেকেই মনে করেন, খনি কার্যক্রম থেকে অর্থ উপার্জন হলেও তা স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনে তেমন প্রভাব ফেলবে না। তবে গ্রিনল্যান্ডের অর্থনীতি উন্নত করার জন্য অধিকাংশ মানুষ খনিশিল্পের প্রসার চায়। কারণ, মৎস্য শিল্পের বাইরে আয়ের নতুন উৎস তৈরি হওয়া প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক আগ্রহ ও ভূরাজনীতি
গ্রিনল্যান্ডে বিরল মৃত্তিকা ধাতু, লিথিয়াম এবং কোবাল্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের উপস্থিতি আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। বিশেষ করে, চীন এবং পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এই আগ্রহ আরও বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে গ্রিনল্যান্ডের খনিজ সম্পদের ওপর নজর দিয়েছে এবং এই খাতে অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা খুঁজছে।
গ্রিনল্যান্ড শুধুমাত্র একটি খনিজ সম্পদসমৃদ্ধ অঞ্চল নয়, বরং এটি বিশ্ব রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও ব্যবহার বৈশ্বিক শক্তিগুলোর জন্য নতুন সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। তবে স্থানীয় মানুষদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়েও সমান গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।