সোমবার, ২ জুন ২০২৫
২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজার ধ্বংসস্তূপ সরাতে ২১ বছর, খরচ হবে ১২ বিলিয়ন ডলার: জাতিসংঘের প্রতিবেদন

গাজার ধ্বংসস্তূপ : ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) হামলা গাজা উপত্যকাকে পরিণত করেছে এক বিপর্যস্ত ধ্বংসস্তূপে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এই ধ্বংসস্তূপ থেকে গাজার ৫০ মিলিয়ন টন ধ্বংসাবশেষ সরাতে প্রায় ২১ বছর সময় লাগবে এবং এতে খরচ হবে প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি গাজার পুনর্গঠন প্রচেষ্টার একটি ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরে। এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান, যা পুরো বিশ্বে একটি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

গাজার বাস্তবতা শুধু এই পরিমাণ ধ্বংসস্তূপে সীমাবদ্ধ নয়, এর সাথে জড়িত রয়েছে এক মানবিক সংকটও। যুদ্ধের কারণে গাজার অর্থনীতি, সামাজিক অবস্থা এবং সার্বিক জীবনযাত্রা সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। শরণার্থী, যাদের অনেকেই তাদের বাড়ি হারিয়ে গত কয়েক মাস ধরে আশ্রয়হীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন, তাদের জন্য এই সংকট আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সংকট শুধু গাজার জন্য নয়, বরং পুরো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও একটি বড় পরীক্ষা।

৬৯ বছরের উন্নয়ন স্থবির হয়ে পড়েছে

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গাজার উন্নয়ন থমকে গেছে। প্রায় ৬৯ বছরের উন্নয়ন সম্ভবনাকে এক নিমিষে থামিয়ে দিয়েছে এই যুদ্ধ। বহু বছর ধরে গাজার জনগণ তাদের উন্নতি ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু যুদ্ধের কারণে এখন সব কিছু বন্ধ হয়ে গেছে। ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং অবকাঠামোগত নির্মাণের সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেছে। বর্তমানে, ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজে অধিকাংশ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো মনোনিবেশ করছে, তবে সেগুলোর অগ্রগতি অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে।

রাফার শহরের পুনর্গঠন

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফার বর্তমানে ধ্বংসের চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখানে প্রয়োজনীয় ভারী যন্ত্রপাতি এবং উপকরণের অভাব এক বড় সমস্যা হিসেবে উঠেছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এই শহরের প্রধান সড়কগুলো পুনরায় চালু করা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। রাস্তা নির্মাণের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামালের অভাব রয়েছে, যার কারণে কাজ সম্পন্ন হতে দীর্ঘ সময় লাগবে। শুধুমাত্র ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজই চলছে, কিন্তু রাস্তা পরিষ্কার করা এবং পুনরায় চলাচলের উপযোগী করা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।

রাফার শহরের অবস্থা এর আগে কখনো এমন কঠিন ছিল না। বাসিন্দারা কেবল নিজেদের জীবিকা অর্জনের জন্য সংগ্রাম করছেন না, বরং মৌলিক চাহিদা যেমন পানি, খাদ্য, এবং স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার জন্যও হিমশিম খাচ্ছেন। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা চেষ্টা করছেন শহরটি ধ্বংসস্তূপ থেকে মুক্ত করতে, কিন্তু শুধুমাত্র স্থানীয়ভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সহায়তা ছাড়া এটি এক বৃহৎ দুর্ভোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শহর ও জীবনযাত্রা পুনর্গঠন এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর অনেকেই তাদের ঘরবাড়ি ফিরে যাচ্ছেন, তবে তাদের জন্য পরিস্থিতি খুব সুখকর নয়। গাজা থেকে বহু মানুষ তাদের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিল, এখন তারা ধ্বংসের মধ্যে নিজেদের জীবন গড়তে বাধ্য হচ্ছে। অনেক বাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ধ্বংসাবশেষ এখনও অপসারণ করা হয়নি। ফলে, গাজাবাসীরা এক কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হচ্ছেন। এর মাঝে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর গাজার পুনর্গঠন কাজ শুরু হলেও, ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারের কাজ অনেক ধীর গতিতে চলছে এবং এটি আগামী দুই দশক ধরে অব্যাহত থাকতে পারে।

জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সহায়ক সংস্থাগুলি গাজা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা তৈরি করছে। তবে, মূল সমস্যা হল যে গাজার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ, যন্ত্রপাতি এবং দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে, যা কাজের গতি স্লো করছে। গাজা এবং এর জনগণের ভবিষ্যত পুনর্গঠন এবং উন্নয়নকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা একান্তই প্রয়োজন।

গাজাবাসীর প্রতি সংকটের তীব্রতা

গাজার বাসিন্দাদের জন্য সবচেয়ে বড় সংকট এখন একটিই – সেই হলো পুনরায় সাধারণ জীবনযাত্রার দিকে ফিরতে পারা। তারা এখনো নিজেদের আশ্রয় এবং পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে গাজায় ফিরে আসা হাজার হাজার শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে চলছেন, কিন্তু তাদের জন্য কোনও স্থায়ী সমাধান এখনও দেখা যাচ্ছে না।

উপসংহার

গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানো এখন সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও যুদ্ধবিরতি হয়েছে এবং গাজার জনগণ তাদের ঘরে ফিরে এসেছে, তবে সেই আনন্দের মধ্যে শান্তি এবং নিরাপত্তা নেই। গাজার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ও মানবিক সহায়তা চালু করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা একান্তই প্রয়োজন। তবে, যেহেতু এ কাজটি ব্যাপক এবং দীর্ঘমেয়াদী, তাই গাজার পুনর্গঠনের জন্য আগামী ২১ বছর একটি কঠিন পথ অনুসরণ করতে হবে।

guest


0 মতামত সমুহ
Inline Feedbacks
View all comments