মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রায় এক সপ্তাহ বাকি। এই নির্বাচনের দিকে নজর পুরো বিশ্বের।
এবার ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে দেশ-বিদেশে কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে চারদিকে বিস্তর আলোচনা চলছে। এ নিয়ে জল্পনাকল্পনার কমতি নেই।
ফলাফল উল্টো হলে; অর্থাৎ নির্বাচনে ট্রাম্প হেরে গেলে পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে, বিশেষ করে অনেক মার্কিনের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে।
৫ নভেম্বরের নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে তাঁর প্রতিপক্ষ ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস। তিনি বর্তমান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প ও কমলার মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে ২০২০ সালের নির্বাচনে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হন। তবে এই নির্বাচনে নিজের পরাজয়ের বিষয়টি এখন পর্যন্ত মেনে নেননি ট্রাম্প।
পরাজয় মেনে নিতে ট্রাম্পের এই অস্বীকৃতি মার্কিন জনগণের মধ্যে ব্যাপক বিভক্তি তৈরি করে। ট্রাম্পের আহ্বানে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি তাঁর উগ্র সমর্থকেরা মার্কিন কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল হিল) হামলা চালান। এই সহিংস হামলার উদ্দেশ্য ছিল, কংগ্রেসে বাইডেনের জয়ের সত্যায়ন ঠেকানো
মার্কিন গণতন্ত্রে অবিশ্বাসের বীজ বপনের বিষয়ে ট্রাম্পের অব্যাহত চেষ্টা দেশটির ভোটারদের মনে আশঙ্কা জাগাচ্ছে। আর সেই আশঙ্কা হলো, আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্প পরাজিত হলে ক্যাপিটল হিলে সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের বিংহামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডোনাল্ড নেইম্যান বলেন, এবার যদি তিনি (ট্রাম্প) হেরে যান, তাহলে আবার যে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলবেন, সে বিষয়ে তাঁর কোনো সন্দেহ নেই। আর ভোটের ফলাফল পাল্টে দিতে এমন কোনো চেষ্টা নেই, যা তিনি করবেন না। এ ছাড়া কমলা হ্যারিসের অভিষেক অনুষ্ঠানেও তিনি অংশ নেবেন না। তিনি এমন এক ব্যক্তি, যিনি কখনোই পরাজয় মেনে নেবেন না।
ট্রাম্পের অতীত কর্মকাণ্ডের যে ইতিহাস তা বলছে, আসন্ন নির্বাচনে তাঁর প্রতারণার চেষ্টা করা কোনো অমূলক বিষয় নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দিতে ট্রাম্প ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছিলেন। এই ষড়যন্ত্রের পথ ধরেই তিনি নানা অপচেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
প্রাণঘাতী দাঙ্গা
ট্রাম্পের সমালোচকেরা ২০২১ সালে ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছেন। সে সময় ট্রাম্প ভোট জালিয়াতির ভুয়া অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি তাঁর সমর্থকদের কংগ্রেস ভবনে যেতে বলেছিলেন। ট্রাম্পের ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর উগ্র সমর্থকেরা ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো হয়েছিলেন। তাঁরা ক্যাপিটল হিলে প্রাণঘাতী দাঙ্গায় জড়িয়েছিলেন।
সমালোচকদের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কেননা, গত মাসেই মিশিগানে এক নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি যদি হেরে যান, তাহলে তাঁদের (ডেমোক্র্যাটদের) প্রতারণার কারণেই হারবেন। প্রতারণা ছাড়া তাঁকে কোনোভাবেই হারানো যাবে না।
ট্রাম্প ও তাঁর সহযোগীরা আইনি উপায় ব্যবহার করেও ২০২১ সালে দাঙ্গার ক্ষেত্র তৈরি করেছিলেন। ওই সময় তাঁরা ৬০টির বেশি মামলা করেছিলেন। এসব মামলায় এমন অভিযোগও করা হয় যে মহামারির অজুহাতে ভোটের নিয়ম পরিবর্তন করেছে স্থানীয় নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ।
এসব মামলা ধোপে টেকেনি। প্রতিটি মামলায় হেরে যায় ট্রাম্প শিবির। ভোট গ্রহণের আগেই নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা উচিত ছিল বলে রায় দেন বিচারক।
এ জন্য এবার আগেই মাঠে নেমেছেন রিপাবলিকানরা। আগাম ভোট শুরুর আগে তাঁরা ১০০টির বেশি মামলা করেছেন। এসব মামলায় মার্কিনরা কীভাবে নিবন্ধিত হন, কীভাবে ভোট দেন, কারা ভোট দিতে পারেন—এ ধরনের নির্বাচনসংক্রান্ত নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।