চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে তীব্র বিরোধ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে
শনিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরীর ওয়াসায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মিটিং চলাকালে এই উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে।
দিনের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সদস্যরা “জুলাই প্রোক্লেমেশন” বাস্তবায়নের দাবিতে লিফলেট বিতরণ করে। সন্ধ্যায় ওয়াসার একটি অফিসে সমন্বয়কদের মিটিং চলাকালে ছাত্রলীগ-নিয়ন্ত্রিত “ডট গ্যাং” নামের একটি দল সেখানে উপস্থিত হয় এবং আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালায়।
এই হামলায় মাসুদসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ঘণ্টাখানেকের জন্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ছাত্রদলের কর্মীদের সহায়তায় তারা সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন।
এই হামলার পেছনে আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফির মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন রাসেল আহমেদ। এ ঘটনায় উত্তেজনা আরও বাড়লে রাত সাড়ে আটটায় রাসেল আহমেদ এবং তার অনুসারীরা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে একটি জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। সংবাদ সম্মেলনে রাসেল দাবি করেন, সমন্বয়ক রেজাউর রহমান ও খান তালাত মাহমুদ রাফি এই হামলার নেপথ্যে রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনের কিছুক্ষণ পর অভিযুক্ত সমন্বয়ক রাফি সেখানে উপস্থিত হন এবং সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “আমি এই ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিচার করা হোক।”
দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে, যা পুরো বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে বিভক্তির মুখে ফেলেছে। রাসেলের অনুসারীরা দাবি করেছেন, রাফি এবং তার সমর্থকরা ব্যক্তিগত স্বার্থে আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে, রাফির অনুসারীরা রাসেল ও তার পক্ষকে অদক্ষ নেতৃত্বের জন্য দায়ী করছেন।
সংবাদ সম্মেলনের সময় দুই পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। উভয় পক্ষই স্লোগান দিতে শুরু করে, যা পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তোলে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এই ঘটনা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আন্দোলনের একাংশ দাবি করছে, এই বিভাজন মেটানোর জন্য শিগগিরই কেন্দ্রীয় পর্যায়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। অন্যদিকে, আন্দোলনের অভ্যন্তরে গ্রুপিং এবং স্বার্থবিরোধী কার্যক্রম বন্ধ করার দাবিও উঠেছে।
উভয় পক্ষই নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে ব্যস্ত, তবে আন্দোলনের সাধারণ সদস্যরা এই বিভক্তিতে হতাশ। তারা মনে করেন, ব্যক্তিগত বিরোধ এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল আন্দোলনের মূল লক্ষ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, পুরো ঘটনার বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তারা হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। একই সঙ্গে তারা আন্দোলনের নেতাদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
এই ঘটনায় আন্দোলনকারীদের মধ্যকার ঐক্যের অভাব এবং নেতৃত্বের সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই বিভাজন মেটানোর জন্য তড়িৎ পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।
-সাইমন ইসলাম