শয্যাসহ নানা সরঞ্জাম পড়ে আছে, পাঁচ বছরেও চালু হয়নি আবাসিক সুবিধা

বাগেরহাটের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান মামুন ২০১৪ সালে নিউরোমাইলাইটিস অপটিকা (এনএমও) নামের এক বিরল ও জটিল রোগে আক্রান্ত হন। তাঁর দুটি হাত ও দুটি পা অনেকটা অবশ হয়ে যায়। ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে সেবা নেন তিনি। আর্থিক কারণে পরবর্তী সময় তিনি মিরপুরের সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে ফিজিওথেরাপি নেওয়া শুরু করেন।

আসাদুজ্জামান ১০ বছর ধরে বাগেরহাট থেকে ঢাকায় এসে দিনে দিনে থেরাপি নিয়ে আবার বাড়ি ফিরে যান। তিনি বলেন, ফাউন্ডেশনের ভেতরে সেবাপ্রাপ্তির আবাসিক সুবিধা না থাকায় তাঁকে এভাবে দিনে দিনে চলে যেতে হয়।

অথচ সেবা নিতে আসা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আবাসিক সুবিধা দিতে ২০১৯ সালে ফাউন্ডেশনের জন্য নির্মিত ১৫ তলার একটি ভবনে ২টি তলা (ফ্লোর) রাখা হয়।

ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা বরাদ্দ করা হয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আবাসিক সুবিধা দেওয়ার জন্য। এমনকি এ জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সরঞ্জামও কেনা হয়। তবে পাঁচ বছর পার হতে চললেও এখনো সেখানে আবাসিক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এখানে এসে দিনের মধ্যেই সেবা নিয়ে চলে যান।

১৩ অক্টোবর সরেজমিন ভবনটির পঞ্চম তলায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের থাকার জন্য ৬০টি শয্যা পড়ে আছে। তবে সেখানে কেউ নেই। আলমারি, টেবিল, চেয়ার, ফ্যানসহ অন্যান্য সরঞ্জাম অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। অন্যদিকে ষষ্ঠ তলা গিয়ে দেখা যায়, সেটি ফাউন্ডেশনের ‘স্টোররুম’ হিসেবে ব্যবহৃর হচ্ছে।

ফাউন্ডেশনের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আবাসিক সুবিধা দিতে নানা আয়োজন এখানে আছে। কিন্তু পাঁচ বছরেও এই সুবিধা চালু হয়নি। সরঞ্জামগুলো পড়ে আছে। এগুলোর যত্নআত্তিও হচ্ছে না।

ফাউন্ডেশনটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি সংস্থা। ১৯৯৯ সালে সংস্থাটি গঠিত হয়। ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের আবাসিক সুবিধা দিতে ২০১৯ সালে বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনতে প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ হয়।

ফাউন্ডেশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আবাসিক সুবিধা চালু করতে গেলে চিকিৎসক, ফিজিওথেরাপিস্ট, অফিস সহায়ক ও পিয়নের মতো জনবল দরকার।

ফাউন্ডেশনের পরিচালক (পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তি) ও যুগ্ম সচিব মো. আজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আবাসিক সুবিধা চালুর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। মূলত জনবলের অভাবে আবাসিক সুবিধা চালু করা যাচ্ছে না। বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় জনবল নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। তবে বিধিমালা তৈরির কাজ চলছে। অর্গানোগ্রাম (জনবলকাঠামো) অনুমোদন পেলে এক বছরের মধ্যে জনবল নিয়োগ দিয়ে এই সেবা চালু করা সম্ভব হবে।

অবশ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আবাসিক সুবিধা চালু করতে সর্বোচ্চ ১০ জন জনবল দরকার। সারা দেশে ফাউন্ডেশনের ১০৩টি সেন্টার আছে। সরকার চাইলে সেসব সেন্টার থেকে লোকবল আনতে পারে। তা ছাড়া কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে অনেক জায়গা থেকে চিকিৎসক-ফিজিওথেরাপিস্ট আনতে পারে। কিন্তু কারও মধ্যে সেই চেষ্টা বা উদ্যোগ নেই।

তবে আজমুল হক বলেন, ফাউন্ডেশনের যে ১০৩টি সেন্টার রয়েছে, সেখানেও জনবলসংকট আছে। তাই চাইলেই সেখান থেকে লোক আনা সম্ভব নয়।

ফাউন্ডেশনকে ২০১০ সালে অধিদপ্তরে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১৩ সালে ‘প্রতিবন্ধী উন্নয়ন অধিদপ্তর’ নামে বাংলা ও ইংরেজি নামের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ফাউন্ডেশনকে অধিদপ্তরে রূপান্তরের বিষয়ে প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় আলোচনাও হয়েছিল। পরে আর এগোয়নি।

ফাউন্ডেশন সূত্র জানায়, এই সংস্থার অনেকে চান না, এটি অধিদপ্তর হোক। কারণ, তখন কর্মকর্তাদের মাঠপর্যায়ে যেতে হবে।

সেবাগ্রহীতা আসাদুজ্জামান মামুন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মতো অনেকে দূরদূরান্ত থেকে এখানে আসেন। তাঁরা দিনে এসে দিনেই সেবা নিয়ে চলে যান। এতে অনেক ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়। আবাসিক সুবিধা থাকলে উপকার হতো। তিনি দ্রুত আবাসিক সুবিধা চালু করার দাবি জানান।