গাজায় অবৈধ আদেশ না মানতে সেনাদের পরামর্শ দিলেন ইসরায়েলের সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজার উত্তরাঞ্চলে খুব সম্ভবত যুদ্ধাপরাধ করছে বলে ধারণা প্রকাশ করেছেন দেশটির সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা এরান এৎজিওন। তিনি ইসরায়েলি কর্মকর্তা ও সেনাদের সেখানে অবৈধ আদেশ পালন না করার পরামর্শও দিয়েছেন।

এরান বলেন, ‘তাঁদের (সেনাদের) অস্বীকার করা উচিত। যদি একজন কর্মকর্তা অথবা একজন সেনার মনে হয়, এমন কিছু ঘটতে চলেছে, যেটি যুদ্ধাপরাধ হতে পারে, তাঁদের অবশ্যই অস্বীকার করা (ওই কাজ করার আদেশ না মানা) উচিত। যদি আমি নিজে সেনা হতাম, আমি ওটাই করতাম। আমার মতে, ইসরায়েলের প্রত্যেক সেনার এটা করা উচিত।’

ইসরায়েলের চারজন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে কাজ করেছেন এরান। তিনি দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের উপপ্রধানের দায়িত্বও পালন করেছেন। সম্প্রতি গাজার উত্তরাঞ্চল নিয়ে বিবিসির সঙ্গে কথা বলেছেন এরান। আর সেখানেই তিনি ওই মন্তব্য করেন। তাঁর মতামতকে ইসরায়েলের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে থাকে।

গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি হামলা থেকে এ মুহূর্তে কিছুই বাদ যাচ্ছে না। শরণার্থীশিবির, বিদ্যালয়, এমনকি হাসপাতালেও হামলা হচ্ছে। উপত্যকাটিতে এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে উদ্বাস্তু হওয়া ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়স্থলেও বোমা ফেলছে ইসরায়েল।

এ উপত্যকার উত্তরের একটি শহর জাবালিয়া। ইসরায়েলি বাহিনী এটি অবরুদ্ধ করে রেখেছে। চরম মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে এ শহরে। সেখানে এখন ইন্দোনেশীয় হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মী ও রোগীদের কাছে এমনকি খাবার পানি পর্যন্ত নেই। সর্বশেষ, গতকাল বুধবার জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি বোমা হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছেন।

ওই হাসপাতালের একজন জ্যেষ্ঠ নার্স ইতিমধ্যে সাহায্যের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এক বার্তা পাঠিয়েছেন। বিবিসি তাঁর ওই বার্তা শুনেছে। সেখানে ওই নার্সকে বলতে শোনা যায়, ‘বন্ধুরা, আমি খুবই ক্লান্ত। আমি বোঝাতে পারব না, আমি ঠিক কতটা ক্লান্ত। পানি শেষ হয়ে গেছে। আমাদের কাছে আর কোনো পানি নেই। আমরা পানির ট্যাংক ভরে দেওয়ার জন্য ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু তারা রাজি হয়নি এবং আমরা জানি না আগামীকাল কী হতে চলেছে। পরিস্থিতি খুবই খারাপ।’

গত বছর ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। হামলায় প্রায় ১২ শ জন নিহত হন বলে দাবি ইসরায়েলের। এ ছাড়া সেখান থেকে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যান হামাসযোদ্ধারা। প্রতিশোধ নিতে সেদিন থেকেই গাজায় নারকীয় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ২৩ লাখ বাসিন্দার এ উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৪২ হাজার ছাড়িয়েছে।

এরান বলেন, ‘প্রতিশোধ নেওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারা যায়। এটা মানুষের স্বাভাবিক আচরণ। কিন্তু আমরা (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) তো কোনো গ্যাং (অপরাধী চক্র) নই। আমরা সন্ত্রাসী সংগঠন নই এবং এমনকি কোনো মিলিশিয়াও নই।’

ইসরায়েলি সাবেক এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমাদের একটি সার্বভৌম দেশ ও ইতিহাস আছে। আমাদের নৈতিকতা, মূল্যবোধ আছে। আমাদের অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে। যদি আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্য হয়ে থাকতে চাই, তবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অধীনে থাকতে হবে।’

এরানের সন্তানরা আইডিএফে আছেন। তাঁর স্বজন ও বন্ধুরাও ইসরায়েলের সেনাবাহিনীতে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি শুধু একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আওয়াজ তোলার চেষ্টা করছি। আমি এটা নিশ্চিত করতে চাই যে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে, এমন কিছুতে কোনো সেনা যেন জড়িয়ে না পড়েন।’

গাজাযুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েলের তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। গাজায় ত্রাণ সরবরাহ না বাড়ালে দেশটিতে অস্ত্র সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘ থেকেও বলা হয়েছে, ইসরায়েল বারবার ত্রাণ পরিবহনে বাধা দিচ্ছে বা বিঘ্ন ঘটাচ্ছে, বিশেষ করে গাজার উত্তরাঞ্চলে।