নতুন পাখি ইসাবেলিন হুইটিয়ার 

ইসাবেলিন হুইটিয়ারের দেখা মিলল বাংলাদেশে। এটি এ দেশের জন্য নতুন পাখি। এ নিয়ে এ দেশে পাখির প্রজাতির সংখ্যা দাঁড়াল ৭৩০। এ মাসের ১৬ তারিখে হঠাৎ ইসাবেলিন হুইটিয়ারের দেখা মেলে কুয়াকাটায়। পাখিদেখিয়ে বন্ধু শাহরিয়ার কবীর রুশদী ও তার সঙ্গী রিদওয়ান ইসলাম রিয়াদ এ পাখিটি আবিষ্কার করেন।

অক্টোবর মাসটি সব সময়ই পাখিদেখিয়েদের জন্য সৌভাগ্যের মাস। এরই মধ্যে এ মাসে এ দেশে ইসাবেলিন হুইটিয়ার ছাড়াও আরও একটি নতুন পাখি আবিষ্কার হয়েছে। ৯ অক্টোম্বর ইয়োলো র‌্যাম্পড ফ্লাইক্যাচার নামের পাখিটি দেখা গেছে কক্সবাজার থেকে। গত বছর এই অক্টোম্বর মাসেই তিনটি নতুন পাখির দেখা মিলেছিল কুয়াকাটায়। সেই লোভেই মূলত রুশদী গিয়েছিলেন কুয়াকাটায়। 

কুয়াকাটা সৈকত থেকে চার কিলোমিটার পশ্চিমে লেবু চরের আশপাশে বেশ ভালো ঝাউবন ও বাদাবন আছে। সেখানেই তাঁরা পাখি দেখতে গেলেন। তেমন কোনো অপরিচিত পাখির দেখা না পেয়ে অনেকটা হতাশা নিয়েই বরিশালে যাওয়ার বাস ধরার জন্য মোটরসাইকেলযোগে বাসস্ট্যান্ডে ফিরছিলেন। এ সময় যখন তারা পশ্চিম বেড়িবাঁধ এলাকায় গেলেন। আচমকা একটি অচেনা পাখি চোখে পড়ল। বেশ খানিকটা পথ চলেও গিয়েছিলেন। তারপর মোটরসাইকেল থামিয়ে বাইনোকুলার দিয়ে দেখে পাখিটি চিনতে পারছিলেন না। প্রথমে তাঁরা বেশ কিছু ছবি ওঠালেন। এরপর পাখির ফিল্ড গাইডে মিলিয়ে দেখলেন, এটি ইসাবেলিন হুইটিয়ার। পাখিটি শনাক্তের পর নিজেরাই আনন্দে উত্তেজিত হয়ে গেলেন। সেই খবরই রুশদী ফোনে আমাকে জানালেন।

হুইটিয়ার নামটি শুনলেই মনে হবে গম অথবা কান; কিন্তু এ নামের উৎপত্তি এর কোনোটিই নয়। পৃথিবীতে এই গণের ৩৩ প্রজাতির প্রায় বেশির ভাগেরই লেজের অংশ সাদা, যা থেকেই এই নামকরণের উৎপত্তি। ইসাবেলিন হুইটিয়ারকে বাংলায় বলা যেতে পারে ইসাবেলিন কানকালি। এর উড়ে যাওয়ার ভঙ্গি আর হেঁটে যাওয়ার ধরন অন্য পাখির চেয়ে আলাদা। পাখিটি একটু উড়ে গিয়ে আবার মাটিতে বসে। একটু নিচু হয়ে হাঁটে, আবার সোজা দৌড় শুরু করে। পাখিটি খুব কাছাকাছি যেতে দিতে চায় না। এরা ২০-২৫ ফুট কাছাকাছি গেলেই উড়ে যায়। পাখিটি প্রথম দেখায় লালচে রঙের মনে হয়, অনেকটা দেখাতে আমাদের দেশের বাবুবাটানের মতন। পা ও ঠোঁটের কালো অংশ বেশ দূর থেকেই বোঝা যায়। দাঁড়ানোর ভঙ্গিটা খুবই অদ্ভুত, একেবারেই সোজা হয়ে দাঁড়ায়। লেজের ওপরটা সাদা আর লেজের মাথাটা কালো, যা উড়ে যাওয়ার সময় স্পষ্ট বোঝা যায়।

বাংলাদেশে ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এক জাতের হুইটিয়ারের দেখা মিলেছিল চট্টগ্রামের পতেঙ্গায়। তবে সেটি ইসাবেলিন হুইটিয়ারের ছিল না। ওই প্রজাতি ছিল ডেজার্ট হুইটিয়ার বা ঊষর কানকালি। এরপর আবারও এ জাতের পাখির দেখা মিলেছিল ওই এলাকায় ১৯৯১ সালের ৭ ডিসেম্বর। গোটা পৃথিবীতে এই গণের প্রায় ৩৩টি প্রজাতি থাকলেও গোটা ভারতবর্ষে ৯ জাতের হুইটিয়ারের দেখা মেলে। এ দেশে এর দেখা পাওয়া একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার। ইসাবেলিন হুইটিয়ারের এ দেশে এর আগে দেখা না মিললেও ভারতের আসাম, গুয়াহাটি, সিকিম, কাঠমান্ডু, ভুটানসহ পাঁচ-ছয়টি জায়গায় দেখার তথ্য আছে। তবে উত্তর ভারতে এর দেখা মেলে। প্রজননকাল কাটায় সাধারণত দক্ষিণ রাশিয়া, ইরান, ইরাক, জর্ডান, সিরিয়া—এসব এলাকায়।

ইসাবেলিন হুইটিয়ার পৃথিবীতে বেশ ভালোভাবেই টিকে আছে। গত ১০ বছরে এই পাখির সংখ্যা বিশ্বব্যাপী অপরিবর্তিত রয়েছে। শীত ও গ্রীষ্মে পাখি দেখার চেয়েও অক্টোবর মাসটি নতুন ও অচেনা পাখি দেখার সবচেয়ে ভালো সময়। কারণ, এ সময় এক অঞ্চলের পাখি অন্য অঞ্চলে পরিযায়ন করে। পরিযায়নের সময় এরা কোন কোন জায়গায় বিশ্রাম নেয়। ইসাবেলিন হুইটিয়ার আমাদের জন্য পরিযায়ী পাখি নয়। চলার পথে ওই এলাকায় বিশ্রাম নিয়ে খাবার খুঁজছিল। 

এ দেশে নতুন পাখি দেখা গেলেই পাখিদেখিয়েদের ছবি তোলার ভিড় শুরু হয়ে যায়। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ছবি তুললে পাখিটি বিরক্ত হবে না। আমাদের সবারই আশা, ইসাবেলিন হুইটিয়ার এ দেশ থেকে নিরাপদে তার ভূমিতে ফিরে যাবে।