আয় নেই, কর্তব্যে নেই, মাথাভারী বাসস

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রধান দায়িত্ব দেশ–বিদেশের সংবাদ সংগ্রহ করে তা গণমাধ্যমের সাহায্যে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের জনগণের কাছে প্রচার করা; কিন্তু দেশের সরকারি মিডিয়া তালিকাভুক্ত ৫৮৪টি দৈনিক পত্রিকা ও ৩৬টি বেসরকারি টেলিভিশনের মধ্যে বাসসের গ্রাহকসংখ্যা ৫০-এর কম। দেশের বাইরে বাসসের কোনো গ্রাহক নেই। 

বাসস সূত্র জানায়, দেশের যে ৪৭টি পত্রিকা ও টেলিভিশন সংস্থাটির গ্রাহক, তার মধ্যে নিয়মিত সেবা নেয় ২৮টি। দেশের বাইরে ভারত, পাকিস্তান, চীন, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া—এই পাঁচ দেশের পাঁচটি সংবাদ সংস্থার সঙ্গে বাসস খবর আদান–প্রদান করে; কিন্তু তারা গ্রাহক নয়। তবে বাসস নিজে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপির গ্রাহক।

সারা বিশ্বে সংবাদ সংস্থাগুলো মূলত গ্রাহকদের কাছে খবর বিক্রি করা আয়ে চলে; কিন্তু এই খাত থেকে বাসসের আয় নেই বললেই চলে। সূত্র জানায়, দেশের গ্রাহকদের কাছ থেকে সংস্থাটির বছরে ৬৭ লাখ টাকার মতো আয় হওয়ার কথা; কিন্তু এর প্রায় অর্ধেক থাকে অনাদায়ি। এর বাইরে ঢাকার মতিঝিলে বাসসের একটি ভবন ভাড়া থেকে তাদের বছরে ৬০ লাখ টাকা আয় হয়।

এই সংবাদ সংস্থাকে চালাতে বছরে ৩৮ কোটি টাকার বেশি অনুদান দিচ্ছে সরকার, যার প্রায় পুরোটাই খরচ হয় কর্মীদের বেতন-ভাতায়। দলীয়করণ আর নানা অনিয়মের মাধ্যমে ইচ্ছেমতো নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়ার ফলে বছর বছর এই ব্যয় বেড়ে চলেছে। আর তাতে মাথাভারী হয়ে ধুঁকছে জনগণের টাকায় চলা এই জাতীয় সংবাদ সংস্থা। সংস্থাটিতে কর্মরত ব্যক্তিদের প্রায় ৪৭ শতাংশই চাকরি করেন সর্বোচ্চ পর্যায়ের গ্রেডে (বিশেষ গ্রেড ও গ্রেড-১)। 

১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে বাসস। মূলত তখনকার অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তানের (এপিপি) ঢাকা ব্যুরোকে বাসসে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। 

বাসসের কাজ কী

‘বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা আইন’বলে চলে বাসস। ওই আইনে বাসসের ‘দায়িত্ব ও কার্যাবলি’ নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। সেখানে আট ধরনের কাজ ও দায়িত্বের কথা বলা আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ দেশ-বিদেশের সংবাদ সংগ্রহ করে গণমাধ্যমের সাহায্যে তা বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের জনগণের কাছে প্রচার করা। জাতীয় সংবাদ বহির্বিশ্বে সম্প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত বাংলাদেশের জাতীয় বার্তা সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা। দেশে বা দেশের বাইরের গণমাধ্যম বা বার্তা সংস্থার সঙ্গে সংবাদ, ফিচার, ছবি বা ভিডিও চিত্র ক্রয়-বিক্রয় করা। 

বাস্তবে বাসসের উল্লেখযোগ্য গ্রাহক নেই। নিজেদের ওয়েবসাইটে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় সংবাদ প্রচার করে বাসস। নিজেদের ফেসবুক পেজেও নানা সংবাদ শেয়ার করা হয়; কিন্তু এসব ডিজিটাল মাধ্যমে পাঠকদের সাড়া কম। 

বাসসের ওয়েবসাইটে গড়ে প্রতিদিন কত পাঠক প্রবেশ করেন (হিট) তা জানা যায়নি। তাদের ফেসবুক পেজে অনুসারী মাত্র ৫ হাজার ৬০০ জন। ফেসবুকে শেয়ার করা খবরে লাইক পড়ে খুবই নগণ্য। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন মাহবুব মোর্শেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা চান বাসস যেন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর নজর কাড়তে পারে, ধীরে ধীরে সে ধরনের প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করা হবে। অতীতে বাসসের সঙ্গে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার চুক্তি ছিল। এখন সেভাবে নেই। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিউজ আদান-প্রদানের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হবে। বর্তমান জনবল দিয়ে সেটি কঠিন। তবে বর্তমান জনবলের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের চেষ্টা হচ্ছে। 

বাসসের আয়-ব্যয়

আইনে বাসসের আয়ের উৎস হিসেবে সরকারি ও বেসরকারি অনুদান, গ্রাহক ফি ও সংবাদ, নিবন্ধ, ফিচার, ছবি ও অন্যান্য দ্রব্যের বিক্রয়লব্ধ অর্থ ও রয়্যালটি, বিজ্ঞাপন থেকে আয় এবং অন্যান্য বৈধ উৎসের কথা বলা হয়েছে। তবে নিজস্ব আয় বাড়ানোর কোনো চেষ্টা বাসসের কখনো ছিল না। সংস্থাটি পুরোপুরি সরকারি অনুদাননির্ভর বলে সেখানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা একাধিক কর্মী জানিয়েছেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বাসসের জন্য সরকারি অনুদান ছিল ৩৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রায় ৩০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে কর্মীদের বেতন-ভাতায়। এর মধ্যে কর্মীদের যাতায়াত ভাতা, শিক্ষা ভাতা, বৈদেশিক ভাতা, বাড়িভাড়া ভাতা, মুঠোফোন ভাতা, কাপড় ধোলাই ভাতা, উৎসব ভাতা, অধিকাল ভাতা, শ্রান্তি বিনোদন ভাতা, আপ্যায়ন ভাতা, বাংলা নববর্ষ ভাতা ও অন্যান্য ভাতা খাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। বিজ্ঞাপন থেকে বাসসের আয় নেই। তবে গত অর্থবছরে বাসস বিজ্ঞাপন খাতে ব্যয় করেছে দেড় লাখ টাকা।

আয়ের বিষয়ে বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, দেশি গ্রাহক তুলনামূলকভাবে কম। তবে অনেক গণমাধ্যম বাসসের ওয়েবসাইট থেকে প্রতিবেদন নিয়ে ব্যবহার করে। তিনি বলেন, গ্রাহক বাড়াতে এবং গ্রাহকদের কাছে পাওনা আদায়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্রাহক কী চায় সেই ফিডব্যাক (মতামত) নেওয়া হবে। বাসসের ওয়েবসাইট থেকে আয় এবং অডিও–ভিডিও সেবা চালু করে আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। মতিঝিলে বাসসের পুরোনো ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন করা গেলে সেখান থেকেও আয় বাড়ানো যাবে। 

বাসস নবম ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী কর্মীদের বেতন–ভাতা দিয়ে থাকে। নবম ওয়েজ বোর্ডে সর্বোচ্চ ধাপ হলো বিশেষ গ্রেড। এটি শুধু ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও প্রধান সম্পাদকের জন্য নির্ধারিত। কিন্তু বাসসে চিত্র ভিন্ন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংস্থাটিতে ৫০ জন আছেন বিশেষ গ্রেডে। যাঁদের ৪৮ জন সংবাদকর্মী এবং প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের দুই প্রধান রয়েছেন। এই দুই পদে দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষ গ্রেড দেওয়া হচ্ছে। যদিও ওয়েজ বোর্ডে সংবাদকর্মী ছাড়া কাউকে বিশেষ গ্রেড দেওয়ার সুযোগ নেই। আর গ্রেড-১-এ আছেন ১১ জন সাংবাদিকসহ মোট ৩০ জন। বাসসে কর্মরত ১৭২ জনের মধ্যে ৮০ জনই বেতন–ভাতা পান বিশেষ গ্রেড ও গ্রেড-১ অনুযায়ী। 

সরকার বদল হলে পদোন্নতি

বাসসে যাঁরা চাকরি করেন, বিশেষ করে সংবাদকর্মীদের প্রায় সবাই স্পষ্টত দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ আওয়ামী লীগ সমর্থক, আরেকটি বিএনপি অথবা জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক। নব্বই-পরবর্তী সময়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদগুলোতে বাসসে রাজনৈতিক বিবেচনায় বাড়তি ও অযোগ্য জনবল নিয়োগ, নিয়ম লঙ্ঘন করে দফায় দফায় পদোন্নতি এবং স্বজনপ্রীতিসহ নানা অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে। সরকার পরিবর্তনের পরপরই বাসসে বঞ্চনা ও হয়রানির আওয়াজ ওঠে। 

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাসসে নিয়মনীতি না মেনে ৫২ জন সাংবাদিক/কর্মকর্তাকে গ্রেড-১–এ এবং ২৭ জনকে বিশেষ গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ১২ জুলাই বাসসের পরিচালনা বোর্ডের সভায় এসব পদোন্নতির ভূতাপেক্ষ অনুমোদন দেওয়া হয়। 

২০০২ সালে করা বাসসের পদোন্নতি ও গ্রেড উন্নয়ন নীতিমালা অনুযায়ী, প্রথম গ্রেড থেকে বিশেষ গ্রেডে উন্নীত করতে হলে প্রথম গ্রেডে ১০ বছর চাকরি করতে হবে; কিন্তু যে ২৭ জনকে তখন বিশেষ গ্রেড দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের কারও ক্ষেত্রেই এই শর্ত মানা হয়নি। এই ২৭ জন প্রথম গ্রেডে কর্মরত ছিলেন এক বছর থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর। অনেকটা একই অবস্থা ছিল প্রথম গ্রেডে পদোন্নতির ক্ষেত্রেও।

২০১২ সালে বাসসের পরিচালনা বোর্ডের ওই সভার কার্যপত্র থেকে জানা যায়, এই পদোন্নতির সময় সংস্থাটির চেয়ারম্যান ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন প্রয়াত ইহসানুল করিম (সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব)। শর্ত পূরণ না করার পরও পদোন্নতি দেওয়ার পেছনে তখনকার কর্তৃপক্ষের যুক্তি ছিল, বৈষম্য নিরসন করে একটি সুস্থ পরিবেশ তৈরি করা।

এবার আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পরও প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। বাসস সূত্র জানায়, সরকার পতনের পরদিন ৬ আগস্ট বাসসে ৪০ জন সাংবাদিক ও কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তাঁরা সবাই বিএনপি অথবা জামায়াত সমর্থক। আওয়ামী লীগ আমলে তাঁরা ‘বৈষম্যের শিকার এবং বঞ্চিত’ ছিলেন বলে দাবি করে নিজেদের পদোন্নতি আদায় করে নেন। পদচ্যুত হওয়ার আগে বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ এসব পদোন্নতি দিয়ে যান। নতুন করে পদোন্নতি দেওয়ার পর বাসসে বেতন–ভাতা খাতে মাসে খরচ বেড়েছে ৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ বছরে প্রায় ৬০ লাখ টাকা খরচ বেড়েছে এই দফায়।

প্রথম আলোর হাতে আসা একটি অফিস আদেশে দেখা গেছে, ৬ আগস্ট একজন স্টাফ রিপোর্টারকে একটি আদেশের মাধ্যমে একসঙ্গে তিনটি পদোন্নতি দেওয়া হয়। তাঁকে সরাসরি বিশেষ গ্রেড দেওয়া হয়। আগের গ্রেডগুলোতে পদোন্নতি দেখানো হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বছরে, ভূতাপেক্ষভাবে। ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী, স্টাফ রিপোর্টার থেকে বিশেষ গ্রেডে মোট বেতন প্রায় ৫০ হাজার টাকা বেশি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একসময় বাসসে নিয়োগ, পদোন্নতি ও বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি হতো পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্তে। এটাই নিয়ম; কিন্তু আওয়ামী লীগের বিগত ১৫ বছরের শাসনামলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই নিয়ম মানা হয়নি। ২০১৪ সালে বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিযুক্ত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব (সাবেক) আবুল কালাম আজাদ। তিনি গত আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ১০ বছর এই পদে ছিলেন। সূত্র জানায়, আবুল কালাম আজাদের আমলে বেশ কিছু নিয়োগ ও পদোন্নতি নিয়ে প্রশ্ন আছে। এর মধ্যে একটি হলো তিনি বাসসের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া ১০ জনকে বিশেষ গ্রেড ও ১ নম্বর গ্রেডে পদোন্নতি দেন। গত বছরের ২ মে বাসসের পরিচালনা বোর্ডের সভায় এই পদোন্নতি বাতিল হয় এবং বাড়তি নেওয়া বেতন-ভাতা সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত হয়; কিন্তু বাসসের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিদ্ধান্তটি কার্যকর করেননি। 

মাথাভারী বাসস

বাসস সূত্র জানায়, সংস্থাটির মোট অনুমোদিত পদ আছে ১৯৯টি। সহসম্পাদক পদ ১২টি। সেখানে কর্মরত মাত্র ৩ জন। অন্যদিকে ১২টি বার্তা সম্পাদক পদের বিপরীতে কর্মরত ১৪ জন। স্টাফ রিপোর্টারের ২৩টি পদের মধ্যে কর্মরত ৯ জন। আর বিশেষ সংবাদদাতার ১১টি পদের বিপরীতে রয়েছেন ১৯ জন। সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারের ১৬টি পদের বিপরীতে এখন আছেন ২০ জন।

স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম

বাসসের একাধিক কর্মী জানান, আওয়ামী লীগ আমলে আবুল কালাম আজাদ ব্যবস্থাপনা পরিচালক হওয়ার পর তাঁর ছয়জন আত্মীয়কে বাসসে নিয়োগ দেন। বাসসের সাবেক চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের তিনজন আত্মীয়কে চাকরি দেওয়া হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেতন-ভাতার মধ্যে পরিবহন খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকলেও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ মাসে ২৩ হাজার টাকা গাড়ির খরচ বাবদ নিয়েছেন। জ্বালানি খরচও নিয়মিত নিয়েছেন তিনি। একটি কমিটি গঠন করে তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে কয়েকটি পদের জন্য এসব ভাতা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। 

স্বজনপ্রীতি ও অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আবুল কালাম আজাদের মুঠোফোনে কল এবং খুদে বার্তা পাঠানো হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

বাসসে নিয়ম ভেঙে পদোন্নতি ও অন্যান্য অনিয়মের মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করেন সংস্থাটির সাবেক বার্তা সম্পাদক আবুল কালাম (মানিক)। তবে দুদক এসব অভিযোগ তদন্ত করেনি। 

পটপরিবর্তনের সঙ্গে পদ পরিবর্তন

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাসসের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন আওয়ামী লীগপন্থীরা। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পরপর সেসব পদে দায়িত্ব পেয়েছেন মূলত বিএনপিপন্থীরা। পরিবর্তনগুলো হয় ১৭ আগস্ট ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে মাহবুব মোর্শেদকে নিয়োগের আগেই।

অবশ্য এসব পদে পরিবর্তন নিয়েও প্রশ্ন আছে। সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক (বর্তমানে ছুটিতে) আনিসুর রহমান ১৯ আগস্ট তথ্য উপদেষ্টা বরাবর একটি চিঠি লেখেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, বাসসে কর্মরত কিছুসংখ্যক সাংবাদিক তাঁকে লাঞ্ছিত করার হুমকি দিয়ে এসব পরিবর্তনের চিঠিতে সই করতে বাধ্য করেন; কিন্তু সংস্থার আইন ও বিধি অনুযায়ী, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবে তিনি কোনো নিয়োগ বা পদায়নের এখতিয়ার রাখেন না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরে ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ এসব পদায়ন অনুমোদন দেন। 

পরিচালনা বোর্ডে কারা 

আইন অনুযায়ী বাসসের পরিচালনা বোর্ড হয় চেয়ারম্যানসহ ১৩ সদস্যের। এর মধ্যে সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয়জন পরিচালক থাকেন পদাধিকারবলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধি। ছয়জন পরিচালক সরকার মনোনীত। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই বোর্ডও গঠন করা হয় দলীয় বিবেচনায়। গত ১৫ বছরে দেখা গেছে সংস্থাটিতে যাঁরা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন, তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর দলটির নেতা ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়। তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত নন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম রহমান, সাংবাদিক রাহাত খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সর্বশেষ ২০২৩ সালে সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদকে চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়। 

২০২৩ সালে গঠন করা বাসসের পরিচালনা বোর্ডে সরকার মনোনীত গণমাধ্যমের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, দ্য পিপলস লাইফ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক এবং একাত্তর টিভির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক (বাবু)। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, সংবাদ প্রতিবেদনের মূল তিনটি দিক হলো অ্যাকুরেসি (সঠিকতা), অবজেকটিভিটি (বস্তুনিষ্ঠতা) ও ফেয়ারনেস (পক্ষপাতহীনতা)। এগুলো বাসস, বিটিভি, বেতারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো অনুসরণ করে না। মানুষ তাদের খবর বিশ্বাস করে না। বাসস মূলত দলীয় প্রচারের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, অসত্য প্রচারের জন্য কেন জনগণের টাকা ব্যয় করা হবে?