এবার স্টিলথ বম্বার দিয়ে হুথিদের আস্তানায় হামলা

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান শুরুর দিন থেকেই লোহিত সাগরে পশ্চিমাদের যুমদূত হয়ে আছে ইয়েমেনের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথি। শত শত ইসরাইল সংশ্লিষ্ট পণ্যবাহী জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা পর এখন বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক নৌপথে পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের ঘোষণাও দিয়েছে ইরান সমর্থিত এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী।

হুথিদের এমন হুমকির পর নড়চড়ে বসে ইসরাইলের প্রধান দোসর আমেরিকা। এতদিন মার্কিন নেতৃত্বে পশ্চিমাদের একটি সামরিক জোট হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েও কোন সফলতা দেখাতে পারছিলো না। উল্টো আমেরিকা ও ব্রিটেনের যুদ্ধজাহাজে উল্টো আক্রমণ করে বসে হুথিরা। এই গোষ্ঠীর সামরিক লক্ষ্যবস্তুকে লক্ষ্য করে একের পর এক বিমান হামলাও করে যাচ্ছে জো বাইডেনের প্রশাসন।

কিন্তু তাতেও কোন কাজ না হওয়ায়, এবার আমেরিকা তাদের সবচেয়ে গোপন এবং অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান নিয়ে ইয়েমেনে হামলা চালিয়েছে। ইয়েমেনে মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা হুথিদের অস্ত্রাগার লক্ষ্য করে একটি সিরিজ বোমা হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার সন্ধ্যায় সংঘটিত এই হামলায় ইরান সমর্থিত হুথি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো অত্যাধুনিক বি-টু স্টিলথ বম্বার বিমান ব্যবহার করলো মার্কিন বাহিনী।

পেন্টাগণ জানিয়েছে, সবশেষ মিশনে তারা মাটির অনেক গভীরে থাকা হুতিদের কমপক্ষে পাঁচটি অস্ত্রাগারে আঘাত করেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিনের দাবি, লোহিত সাগর এবং এডেন উপসাগর দিয়ে চলাচল করা বাণিজ্যিক এবং সামরিক জাহাজগুলোকে হুমকি দেয়ার জন্য উন্নতমানের অস্ত্র ওই সব স্থানে লুকিয়ে রাখত হুথিরা। বি-টু স্টিলথ বম্বার সেসব অস্ত্রাগার ধ্বংস করে দিয়েছে।

স্টিলথ প্রযুক্তিতে নির্মিত মার্কিন বাহিনীর বি-টু স্পিরিটের বোমারু বিমানগুলো অনেক ভারী ধারণক্ষমতা সম্পন্ন। স্টিলথ প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোপন প্রযুক্তি হিসেবেও পরিচিত। এটি এমন এক ধরনের অগ্রসর প্রযুক্তি যা রাডার, ইনফ্রারেড, সোনার এবং অন্যান্য শনাক্তকরণ পদ্ধতিকে ফাঁকি দিতে পারে। এই প্রযুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর নজর এড়িয়ে চলা। এটি অনেক বেশি বোমা ও মিসাইল বহনে সক্ষম।

লয়েড অস্টিন আরও জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নির্দেশেই হুথিদের ওপর হামলায় বি-টু স্টিলথ বম্বার ব্যবহার করা হয়েছে। ইয়েমেনে হুতিদের গোপন অস্ত্রাগারগুলো লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র এমন এক সময়ে হামলা চালিয়েছে, যখন মধ্যপ্রাচ্যে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিশেষ করে এই অঞ্চলে তাদের মিত্র ইসরায়েল ইরান ও তার মিত্র বাহিনীগুলোর দ্বারা হুমকির মুখে আছে।

গাজায় ইসরাইলের হত্যাযজ্ঞ শুরুর পর থেকে হুতিরা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্যপথকে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এই গোষ্ঠী ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল ব্যবহারের পাশাপাশি লোহিত ও এডেন উপসাগরে পশ্চিমা জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালানোরও দায় স্বীকার করেছে। বড় হুমকি হয়ে ওঠা হুথিদের নিরস্ত্র করতে তাই সেরা অস্ত্রই ব্যবহার করলো যুক্তরাষ্ট্র।