যে কারণে ইরানের মিসাইল হামলার জবাব দিতে বিলম্ব করছে ইসরায়েল


মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সংকটে ভুগছে ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একের পর এক হামলার জেরে তৈরি হয়েছে এ পরিস্থিতি। আর সে কারণেই ইরানের হামলার জবাব দিতে দেরি করছে ইসরায়েল। সম্প্রতি এমন তথ্য উঠে এসেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে। যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে থাড মিসাইল পাঠানোর ঘোষণা দিলেও খুব বেশিদিন সামরিক সহায়তা চালিয়ে যেতে পারবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ অবস্থায় নিজেরাই অস্ত্র উৎপাদন বাড়াতে তোড়জোর শুরু করেছে তেলআবিব।

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের জেরে, গত এক বছর ধরেই, ইরান সমর্থিত হুতি-হিজবুল্লাহসহ প্রক্সিগ্রুপগুলোর হামলা মোকাবেলা করতে হচ্ছে ইসরায়েলকে। বেশকয়েকবার গাজা থেকেও ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে হামাস।

সশস্ত্র এসব গোষ্ঠী প্রতিদিনই আকাশপথে ইসরায়েলে হামলা চালাচ্ছে। ছুঁড়ছে বিভিন্ন পাল্লার রকেট, মিসাইল আর ড্রোন। আর এসব হামলা প্রতিহতে প্রয়োজন হয় বিপুল ইন্টারসেপ্টর মিসাইল। এবার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এই এন্টি রকেট-ড্রোন ক্ষেপণাস্ত্রের সংকট দেখা দিয়েছে ইসরায়েলে। আর এ কারণেই ইরানের মিসাইল হামলার জবাব দিতে বিলম্ব করছে ইসরায়েল; এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা। তাদের ভাষ্য; গাজা আর লেবানন দুই অঞ্চলে সমানতালে অভিযান চালাতে হিমশিম খাচ্ছে নেতানিয়াহু প্রশাসন।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস বলছে, ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রের অভাবের কারণেই ইসরায়েলকে থাড মিসাইল পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে, বিশেষজ্ঞদের মত- খুব বেশি দিন অস্ত্র সরবরাহ চালিয়ে যেতে পারবে না বাইডেন প্রশাসন। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ইউক্রেনকেও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র দিতে হচ্ছে তাদের। আর সে কারণেই খুব বেশি দিন আর এমন শক্তিশালী থাকতে পারবে না ইসরায়েল।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ড্যানা স্ট্রোউল বলেন, অস্ত্র-গোলাবারুদ একটি বড় ইস্যু ইসরায়েলের জন্য। যদি ইরান বড় হামলা চালায়। আর হিজবুল্লাহও সাথে যোগ দেয়, তাহলে বিপাকে পড়বে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। যুক্তরাষ্ট্র তো আর যত প্রয়োজন ততো অস্ত্র পাঠাতে পারবে না। একই সাথে ইউক্রেন এবং ইসরায়েলকে অস্ত্র পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়।

এদিকে, খোদ ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তারাই বলছেন, সক্ষমতার কেবল ১০ শতাংশ দেখিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। বড় হামলার শঙ্কায়ও আছেন অনেক। তাই এরইমধ্যে অস্ত্রের উৎপাদন বাড়াতে কাজ শুরু করে দিয়েছে ইসরায়েল। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, কর্মীদের ছুটি বাতিল করেছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান।

আইডিএফ কর্মকর্তা আসাফ ওরিয়ন বলেন, হিজবুল্লাহ তাদের সক্ষমতার মাত্র ১০ শতাংশ ইসরায়েলের ওপর প্রয়োগ করেছে। দিনে কয়েক হাজার রকেট-মিসাইল না ছুঁড়ে কেবল কয়েকশ’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ছে। ইচ্ছা করেই তারা এটা করছে। অনেক বড় হামলা তারা চাইলেই চালাতে পারে।

৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে প্রায় ২৬ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে হামাস, হিজবুল্লাহ। এপ্রিল ও অক্টোবরে ইরানও ২ দফা চালিয়েছে মিসাইল ও ড্রোন হামলা। আর তার পর থেকেই হামলার কঠিন জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে ইসরায়েল।