পুরোনো বই বিক্রি করে আয় করেন এই তরুণ

করোনার পর থেকেই মাথায় ঘুরছিল, আয় রোজগারের জন্য একটা কিছু করা দরকার। অধিকাংশ শিক্ষার্থী টিউশনিটাই বেছে নেন। তবে একটু ভিন্ন পথে হেঁটেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী সৌরভ দত্ত চৌধুরী। ছোটবেলার শখটাকেই কাজের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি।

সৌরভ বলেন, ‘আগে থেকেই আমার পুরোনো জিনিস সংগ্রহের শখ। মনে আছে, ছোটবেলায় পুরোনো জিনিসের আড়ত ঘুরে বেড়াতাম—পুরোনো দিনের কয়েন, মেডেল, হারিয়ে যাওয়া দুর্লভ জিনিসপত্রের খোঁজে। একদিন মাথায় এল, এসব জায়গায় তো অনেক পুরোনো বইও থাকে। বিক্রি করতে পারলে হয়তো ভালো লাভ হবে। সেই ভাবনা থেকে ১০-১২টি বই কিনে পুরোনো বইয়ের গ্রুপে বিক্রির বিজ্ঞাপন দিই। এক দিনের ভেতর বইগুলো বিক্রি হয়ে যায়। সেখান থেকে পথচলা শুরু।’

২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে ফেসবুক গ্রুপ ‘সৌরভের দুর্লভ বই সংগ্রহশালা’য় বই বিক্রি করছেন। এখন গ্রুপে সদস্যের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। শুরুতে গ্রুপের এই নাম ছিল না, নাম বদল করতে হয়েছে। কারণটাও ব্যাখ্যা করলেন সৌরভ, ‘অনলাইনে অনেক ধরনের প্রতারণা হয়। মানুষকে আশ্বস্ত করতে একজন মানুষের চেহারার দরকার হয়, যার কাছে মানুষ অভিযোগ, অনুযোগ জানাতে পারবে, জবাবদিহি চাইতে পারবে। তাই নিজের নাম যুক্ত করি। বই বিক্রি আমার ব্যবসার মূল। তবে মাঝেমধ্যে যদি পুরোনো পুঁথি, ডাকটিকিট সংগ্রহ করতে পারি, সেগুলোও বিক্রি করি।’ ক্যাম্পাসের কাছেই একটা মেসে থেকে পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করেন সৌরভ।

নানা ধরনের দুর্লভ বই তাঁর সংগ্রহশালায় পাওয়া যায়। এর মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন ও ভারত থেকে প্রকাশিত বই, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের বই, সিলেটি নাগরি ভাষার বই, মণিপুরি ভাষার বই, সেবা প্রকাশনীর পুরোনো সংস্করণ, পুরোনো কমিকস, পুঁথি, কিতাব ও ইসলামি বইও আছে। সিলেটের বিভিন্ন পুরোনো বইয়ের দোকান থেকে এসব সংগ্রহ করেন তিনি। সৌরভ দত্ত বলেন, ‘ঢাকায় যেমন নীলক্ষেত, সিলেটে তেমন বইয়ের মার্কেটের নাম রাজা ম্যানশন। সেখানে চার-পাঁচটা দোকানে পুরোনো বই বিক্রি হয়। যেহেতু আমি ডিলারদের কাছ থেকে সরাসরি এবং অল্প দামে বই সংগ্রহ করতে পারি, তাই দামও কম রাখি। বইভেদে ১০-৫০০ টাকা লাভ থাকে। বই যত পুরোনো ও দুর্লভ হয়, লাভ তত বেশি। এর বাইরে মোটামুটি নতুন ধরনের বইগুলো সাধারণত ৬০ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি করি।’