শেরপুরে তিন নদীর বাঁধে সাত ভাঙন, দুই উপজেলা শহর প্লাবিত

টানা বর্ষণ আর ঢলের পানির প্রবল চাপে শেরপুরে মহারশি, চেল্লাখালি ও ভোগাই নদীর বাঁধের অন্তত সাতটি স্থানে ভেঙে গেছে। প্লাবিত হয়েছে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর ও নালিতাবাড়ী পৌর এলাকাসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম।

টানা বর্ষণ আর ঢলের পানিতে শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সবক’টি পাহাড়ি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির প্রবল চাপে মহারশি, চেল্লাখালি ও ভোগাই নদীর বাঁধের অন্তত সাতটি স্থানে ভেঙে গেছে। প্লাবিত হয়েছে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর ও নালিতাবাড়ী পৌর এলাকাসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্যমতে, নালিতাবাড়ীতে চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫২৫ সেন্টিমিটার ও ভোগাই নদী বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইসঙ্গে বেড়েছে মহারশি, সোমেশ্বরী, মৃগী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি।

গত ২৪ ঘণ্টায় ঝিনাইগাতীতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩২০ মিলিমিটার। চলমান পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জেলার আমন আবাদের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মহারশি নদীর বাঁধের খৈলকূড়ায় তিনটি স্থানে ভেঙে গেছে। বাঁধ উপচেও প্রবল বেগে ঢলের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে ঝিনাইগাতি উপজেলা সদর বাজার ও উপজেলা পরিষদ প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে নালিতাবাড়ীর শিমুলতলা, ঘাকপাড়া, মন্ডলিয়াপাড়া, ভজপাড়া ও সন্নাসীভিটায় ভোগাই এবং চেল্লাখালীর বাঁধ ভেঙে গেছে। নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে শেরপুর-নালিতাবাড়ী গাজিরখামার সড়ক।

বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতির অন্তত ১০টি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম।

তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর জমির উঠতি আমন ফসল। রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে স্থানীয়রা। বাড়িঘরে পানি ওঠায় রান্না করতে পারছে না এসব এলাকার লোকজন। ফলে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

ঝিনাইগাতী বাজারের আকতার আলী বলেন, ‘আমার দোকানে পানি উঠেছে। এতে দুই লাখ টাকার বই নষ্ট হবে। শহর রক্ষা বাঁধ থাকলে মহারশি নদীর পানিতে তাহলে আমাদের এমন ক্ষতি হতো না।’

বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আমির আলী বলেন, ‘দোকানে মধ্যে পানি সকাল থেকেই। একটু ঢল এলেই পানি বাড়ছে। আমরা ঝিনাইগাতীর মানুষ আগে থেকেই এটার ভুক্তভোগী। কিন্তু প্রশাসনিক নজর কখনোই এদিকে পড়ে না।’

ঝিনাইগাতী সদরের হোসেনে আরা বলেন, ‘রান্না করতে পারছি না। রাস্তায় পানি ওঠায় চলাচলও করতে পারছি না। খুব কষ্টে আছি।’

ঝিনাইগাতী বাজারের ব্যবসায়ী আবু বকর বলেন, ‘আমাদের দোকানপাটে পানি উঠেছে। অনেক ব্যবসায়ীরই ক্ষতি হয়েছে। প্রতি বছরই নদীর বাঁধ ভাঙে আর আমাদের ক্ষতি হয়। কেউ এদিকে দেখে না। নদীর তীর জুড়ে স্থায়ী বাঁধ চাই আমরা।’

নালিতাবাড়ীর রফিক বলেন, ‘এবার শহরে পানি থৈ থৈ করছে। জীবনে এই সময়ে উপজেলা শহরে এমন পানি দেখিনি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছি আমরা।’

নালিতাবাড়ীর কৃষক খাইরুল বলেন, ‘আমাদের সব ফসল এখন পানির নিচে। এই ধান এহন খাইয়া গেলেগা আমরা বাচমু কেমনে?’

ঝিনাইগাতী উপজেলার কৃষি অফিসার হুমায়ুন দিলদার জানান, এ বছর ঝিনাইগাতীতে সাড়ে চৌদ্দ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ও সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ আংশিক নিমজ্জিত রয়েছে। দ্রুত পানি নেমে না গেলে অনেক ক্ষতি হবে।’

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বলেন, ‘মহারশি নদীতে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে ফিজিবিলিটি প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন মহলে পাঠানো হয়েছে। সকাল থেকে আমাদের টিম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আছে।